কিভাবে আল্লাহর সাথে শিরক করা হয়?
كيف شرك مع الله؟
আলোচ্য বিষয়ঃ
* ইবাদতের প্রকারভেদ:
* ইবাদত ও উবুদিয়্যাতের দুটি মূলনীতি:
* “ইবাদত” এর আমল সমূহ:
ইবাদতের প্রকারভেদঃ
“ইবাদত” শব্দটি عبد “আবদ” শব্দ থেকে গৃহীত, যার অর্থ; “দাসত্ব”। আরবিতে عبد দাসত্ব বুঝতে দু’টি শব্দ ব্যবহৃত হয়। (এক) عبادة ইবাদত” (দুই) عبودية ‘উবূদিয়্যাত’।
ইবাদত ও উবুদিয়্যাতের ক্ষেত্রে দুটি মূলনীতিঃ
১.”ইবাদত” তথা “আল্লাহর হক্ব”:
ইবাদতের ক্ষেত্রে দেখতে হবে শরিয়তের অনুমতি, অর্থাৎ আমরা যে আমলটি করব, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সুন্নতের অনুমতি আছে কিনা দেখতে হবে। ইবাদতের আমল হচ্ছে, অন্তর ও বাহ্যিক দিক থেকে সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন; দু’আ, কুরবানি, সালাত, সাওম ইত্যাদি।
২. “উবুদিয়্যাত” অথবা “বান্দার হক্ব” অথবা মুয়ামেলাত:
এ তিনটি শব্দের ব্যবহারিক দিক থেকে পার্থক্য থাকলেও মূলত একটি বিষয়কে বুঝায়, তা হলো; একে অন্যের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের আদান-প্রদান। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে শরীয়তের নিষিদ্ধ/হারাম কিনা, অর্থাৎ আমরা যে কাজটি করব, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত দ্বারা নিষিদ্ধ/হারাম সাব্যস্ত হয়েছে কিনা খুঁজতে হবে। উবুদিয়্যাত/মুয়ামেলাত/বান্দার হক্ব বলতে বুঝায়, মানুষ পরস্পরে যে লেন-দেন, বেচা-কেনা, চুক্তি, ওয়াদা-অঙ্গীকার ও পার্থিব ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য দুনিয়াবী কাজ-কর্ম, পরিবার, সমাজ ইত্যাদি যা ব্যক্তি করে থাকে। এ সকল কর্ম সরাসরি ইবাদত নয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু এ সকল বিষয়ে হারাম বর্জন করে যদি ইসলামী নীতিলার ভিতরে হয় এবং তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়, তখন তাও ইবাদতে পরিণত হয়।
(এক) عبادة ইবাদত” এর আমল সমূহ: ইবাদতের অর্থ উপাসনা; এর উপাদান হচ্ছে, বান্দা তার রবের জন্য অন্তরের গভীর ভালোবাসা ও বিনয়-বিনম্র প্রকাশ করে, চোখের পানি ঝরাবে, তাঁর সামনে হীন থেকে হীনতা স্বীকার করে নিজেকে উজাড় করবে। এগুলো প্রকাশ মাধ্যম হলো দু’আ, উৎসর্গ-মান্নত, কুরবানী বা পশু জবাই, রুকু- সিজদাহ, ইত্যাদি। এসকল কাজের অন্তরের উদ্দেশ্য এবং কর্মগত ভাবে দু’টাই আল্লাহর জন্য নির্ধারিত।
১. الدعاء দু’আর মাধ্যমে শিরকঃ
দু‘আ আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত :
দু‘আ আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোনো মানুষের নিকট চাওয়া যায় না। কেননা, তা আল্লাহর ইবাদাত-উপাসনার অন্তর্গত বিষয়। সে জন্য তিনি তা কেবল তাঁর কাছেই চাওয়ার নির্দেশ করে বলেন,
﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ﴾ [غافر: ٦٠]
“আর তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন: তোমরা আমাকে আহ্বান কর, আমি তোমাদের আহ্বানে সাড়া দেব।’’ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ দু‘আ হ’ল ইবাদত’। তিরমিযী, আবুদাঊদ প্রভৃতি, মিশকাত হা/২২৩০ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, পরিচ্ছেদ-২। রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেনمح العبادة الدعاء দু’আ ইবাদতের মজ্জা ও মূল (তিরমিযী) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ لَمْ يَدْعُ اللهَ سُبْحَانَهُ غَضِبَ عَلَيْهِ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহকে ডাকে না, তিনি তার উপরে ক্রুদ্ধ হন। (ইবনু মাজাহ হা/৩৮২৭ দু’আ অধ্যায় ৩৪,দো‘আর মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ-১)
দু‘আর প্রকারভেদ أنواع الدعاء
দু‘আ বা আহ্বান দু’প্রকার:
ক. কিছু চাওয়ার দু‘আ دعاء مسألة যে সব বস্তু জীবিত মানুষদের স্বাভাবিক শক্তি ও সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে, ইচ্ছা করলে তারা তা অপরকে দিতে পারে, বা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, এমন বস্তু কোনো মানুষের কাছে চাওয়া যেতে পারে। যেমন কারো কাছে টাকা-পয়সার চাওয়া, সাহায্য চাওয়া, পানিতে পড়ে গেলে উঠানোর জন্য ডাকা বা সাহায্য চাওয়া, মাথার বোঝা পড়ে গেলে উঠাতে সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি জাতী, ধর্ম, বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী নির্বিশেষে সকলেই এই ধরনের সাহায্য প্রার্থনা করে।
খ. দু‘আ-উ ইবাদাত : অলৌকিক অপারগতা, দুর্বলতা ও বিনয় প্রকাশের মাধ্যমে দু‘আ করা। সকল যুগের সকল ধর্মের মানুষই তার পূজিত উপাস্যকে এভাবে ডাকে অলৌকিক সাহায্য লাভের জন্য। কুরবানী, মান্নত, সিজদা ইত্যাদি আমল সবই দু’আ কবুলের জন্যই করে। যেন, যার পূজা বা উপাসনা করা হচ্ছে সে খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি প্রার্থনা কবুল করেন সেজন্যই বাকি সকল প্রকারের উপাসনার কর্ম করা হয়। বিশ্বের সকল মুশরিকের ন্যায় আরবের মুশরিকগণের মূল শিরক ছিল অলৌকিক বা গাইবি সাহায্যের জন্য আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকা। ঠিক একই কারণে আজ আমাদের মুসলিম সমাজে প্রচলিত পীর-অলি বুজুর্গ, মৃত পীরের কবর ইত্যাদি নামে-বেনামে তাদের উদ্দেশ্যে পশু জবাই মান্নত করে বিপদ আপদ থেকে উদ্ধারের জন্য, ব্যবসায় বরকতের জন্য, সন্তানের সুস্থতার জন্য ইত্যাদি কারণে দোয়া বা প্রার্থনা করে। এটি সম্পূর্ণরূপে “শিরক” মহান আল্লাহ তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন;
قُلِ ادْعُواْ الَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِهِ فَلاَ يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنكُمْ وَلاَ تَحْوِيلاً
বলুনঃ তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে কর, তাদেরকে আহবান কর। অথচ ওরা তো তোমাদের কষ্ট দুর করার ক্ষমতা রাখে না এবং তা পরিবর্তনও করতে পারে না।
أُولَـئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا
যাদেরকে তারা আহবান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য মধ্যস্থ তালাশ করে যে, তাদের মধ্যে কে নৈকট্যশীল। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ। (সূরা বনী-ইসরাঈল ৫৬,৫৭)
আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি! যত বড় বিপদ আসুক না কেন, আশ্রয় চাওয়া, নিঃসন্তানীর জন্য সন্তান চাওয়া, অথবা বরকত হাসিল করা, ব্যবসায় উন্নতি হওয়া, যাই হোক না কেন আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইব। আল্লাহ ব্যতীত কোনো পীর অলি বুযুর্গ ইত্যাদি কারও কোনো ক্ষমতা নেই বিপদ থেকে উদ্ধার করার অথবা বরকত বা কোন কিছু দান করার। মহান আল্লাহ আমাদের কবুল করুক। আমিন!
২. ذبح الانعام পশু যবাই বা কুবানী করার মাধ্যমে শিরক:
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ, لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতি পালক আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল (সূরা ৬ আন’য়াম ১৬২, ১৬৩)
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন। (সূরা ১০৮ কাউসার ২)
হাদিসে এসেছে; আলী (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সা:) আমাকে চারটি বাক্য শিখিয়ে দিয়েছেন, তার প্রতি আল্লাহর লানত, যে গায়রুল্লাহর নামে জবাই করে…(মুসলিম)
অতএব: কিতাব ও সুন্নাহর থেকে স্পষ্ট যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই জবাই করাকে নির্দিষ্ট করে। যেমন; আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবের বহু স্থানে জবাই করাকে নামাজের সাথে উল্লেখ করেছেন। আর এ কথা যখন প্রমাণিত যে, জবাই হলো মহান আল্লাহ ইবাদত এবং বড় আনুগত্যের কাজ, যখন তা গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা হয়, তখন তা ইসলাম থেকে বহিষ্কারকারী বড় শিরক হবে।
পশু যবাই করা মূলত দু’প্রকার :
ক. স্বাভাবিক অবস্থায় যবাই, যার দ্বারা আল্লাহ বা অপর কারো সন্তুষ্টি উদ্দেশ করা হয় না। মাংস বিক্রি করা বা তা ভাগাভাগি করে নেয়ার উদ্দেশ্যে যে সব পশু যবাই করা হয়, তা এ প্রকারের আওতায় পড়ে।
খ. বিশেষ অবস্থায় যবাই, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী, বিপদাপদ দূরীকরণার্থে মানত পূর্ণ করাস্বরূপ হয়ে থাকে।
যবাই সঠিক হওয়ার শর্ত :
পশু যবাই যে প্রকারেরই হোক, তা সঠিক হওয়ার জন্য দু’টি শর্ত রয়েছে :
ক, যবাই করার সময় আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মহত্ব প্রকাশের জন্য ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে আল্লাহর নাম নিয়ে তা যবাই করতে হবে।
খ. যবাই করার স্থানটি মুশরিকদের যে কোনো ধরনের প্রতিমা, মূর্তি ও মেলা (ওরস) বসানোর স্থান হওয়া থেকে পবিত্র হতে হবে, কারণ, যে স্থানে কোনো প্রতিমা বা মূর্তির সম্মান করা হয় অথবা যেখানে মুশরিকদের মেলা (ওরস) বসে, সে স্থানটি আল্লাহ তা‘আলার নামে যবাই করার জন্য উপযুক্ত স্থান নয়। সেখানে যবাই করার সময় আল্লাহর নাম হাজার বার নিলেও তা আল্লাহর জন্য না হয়ে গায়রুল্লাহর জন্যেই হবে এবং যবাইকারী ও সেখানে যবাই এর জন্য পশু উৎসর্গকারী উভয়েই মুশরিক হিসেবে গণ্য হবে। কারণ, এ স্থানে যবাইকারী ও পশুদানকারী প্রকৃতপক্ষে এ স্থানে অবস্থিত প্রতিমার সম্মানের জন্যই অথবা সেখানে অনুষ্ঠিত বার্ষিক মেলার কারণেই এখানে যবাই বা দান করেছে।
দ্বিতীয় শর্তটির প্রমাণে সাবিত ইবন দাহহাক (রা:) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন :
نَذَرَ رَجُلٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَنْحَرَ إِبِلًا بِبُوَانَةَ (وَهِيَ مَوْضِعٌ فِيْ أَسْفَلِ مَكَّةَ دُوْنَ يَلَمْلَمْ) فَسأل النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: إِنِّي نَذَرْتُ أَنْ أَنْحَرَ إِبِلًا بِبُوَانَةَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ كَانَ فِيهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْجَاهِلِيَّةِ يُعْبَدُ؟» قَالُوا: لَا، قَالَ: «هَلْ كَانَ فِيهَا عِيدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ؟»، قَالُوا: لَا، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوْفِ بِنَذْرِكَ، فَإِنَّهُ لَا وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، وَلَا فِيمَا لَا يَمْلِكُ ابْنُ آدَمَ»
‘‘এক ব্যক্তি (ইয়ালামলাম পাহাড়ের পাদদেশে মক্কার নিম্ন ভূমিতে অবস্থিত) ‘বাওয়ানা’ নামক স্থানে একটি উট উৎসর্গ করার জন্য মানত করেছিল। সে তার মানত পূর্ণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে স্থানের উদ্দেশ্যে মানত করেছো সেখানে জাহেলী যুগে কোন প্রতিমা ছিল কি না? তারা বললেন : না, তা ছিল না। তিনি আবার বললেন : সেখানে মুশরিকদের বার্ষিক কোন মেলা (ওরস) বসতো কি না? তারা বললেন : না, তাও হত না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমার মানত (সেখানে) পূর্ণ করতে পার, তবে জেনে রেখো! আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মানত পূর্ণ করতে নাই।’’ (আবু দাউদ, প্রাগুক্ত; কিতাবুল আইমানি ওয়ান নুযূর , বাব : মা ইউমারু বিহী মিনাল ওয়াফা-ই বিন নাযরি; ৩/৬০৭; হাদীস নং ৩৩১৩)
এখানে দেখা যাচ্ছে যে, (রা:) সে ব্যক্তিকে উক্ত স্থানে তার মানত পূর্ণ করার জন্য ঠিক তখনই অনুমতি দিলেন যখন সে স্থানটি জাহেলী যুগে মুশরিকদের কোনো প্রতিমা বা ঈদ থেকে মুক্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হলেন। সাথে সাথে সর্বশেষ বাক্যটির দ্বারা আরো বলে দিলেন যে, যে স্থানে কোনো প্রতিমা থাকে বা যেখানে মুশরিকদের বার্ষিক মেলা তথা ওরস বসে, সে স্থান কোন প্রকার মানত পূর্ণ করার জন্য উপযোগী নয়। কেউ করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তার কর্মের সাথে মুশরিকদের কর্মের সাদৃশ্য হবে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُم»
‘‘যে ব্যক্তি তার কাজে ও কর্মে অপর কোনো জাতির সাথে সাদৃশ্য প্রকাশ করবে সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে।’’ (প্রাগুক্ত; কিতাবুল লেবাছ , বাব নং- (৫), ৪/৩১৪)
৩. নযর نذر মানত- উৎসর্গ করার মাধ্যমে শিরকঃ
উৎসর্গ করা ইবাদতের একটি সার্বজনীন প্রকাশ। পূজিত (যার ইবাদত-উপাসনা করা হয় এমন) বস্তু বা ব্যক্তিকে খুশি করতে এবং তার আশীর্বাদ, করুনা বা নেক নজর লাভ করতে মানত, সাদাকা বলি কুরবানি নজর-নিয়াজ ইত্যাদি নামে ফল, ফুল, ফসল অর্থ পশু ইত্যাদি উৎসর্গ করা হয়। আল্লাহ ছাড়া কারোর উদ্দেশ্যে এরূপ উৎসর্গ “শিরক” মুশরিকদের এজাতীয় শিরকের বিষয়ে আল্লাহ বলেন;
وَجَعَلُواْ لِلّهِ مِمِّا ذَرَأَ مِنَ الْحَرْثِ وَالأَنْعَامِ نَصِيبًا فَقَالُواْ هَـذَا لِلّهِ بِزَعْمِهِمْ وَهَـذَا لِشُرَكَآئِنَا فَمَا كَانَ لِشُرَكَآئِهِمْ فَلاَ يَصِلُ إِلَى اللّهِ وَمَا كَانَ لِلّهِ فَهُوَ يَصِلُ إِلَى شُرَكَآئِهِمْ سَاء مَا يَحْكُمُونَ
আল্লাহ যেসব শস্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো থেকে তারা এক অংশ আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে অতঃপর নিজ ধারণা অনুসারে বলে এটা আল্লাহর এবং এটা আমাদের অংশীদারদের। অতঃপর যে অংশ তাদের অংশীদারদের, তা তো আল্লাহর দিকে পৌঁছে না এবং যা আল্লাহর তা তাদের উপাস্যদের দিকে পৌছে যায়। তাদের বিচার কতই না মন্দ। (সূরা ৬ আন’য়াম ১৩৬)
﴿وَقَالُواْ هَٰذِهِۦٓ أَنۡعَٰمٞ وَحَرۡثٌ حِجۡرٞ لَّا يَطۡعَمُهَآ إِلَّا مَن نَّشَآءُ بِزَعۡمِهِمۡ وَأَنۡعَٰمٌ حُرِّمَتۡ ظُهُورُهَا وَأَنۡعَٰمٞ لَّا يَذۡكُرُونَ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَيۡهَا ٱفۡتِرَآءً عَلَيۡهِۚ﴾ [الانعام: ١٣٨]
‘‘তারা বলে- এ সব চতুষ্পদ জন্তু, শস্যক্ষেত্র ও নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ তাদের ধারণামতে আমরা যাকে ইচ্ছা করি কেবল সে ছাড়া অন্য কেউ তা খেতে পারবে না। আর কিছু সংখ্যক চতুষ্পদ জন্তুর পিঠে আরোহণ হারাম করা হয়েছে এবং কিছু সংখ্যক চতুষ্পদ জন্তুর উপর তারা ভ্রান্ত ধারণাবশত আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে না।’’ (সূরা ৬ আন’য়াম ১৩৮)
মানতের হুকুম
মানত করার বিধান কি? ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত না মুস্তাহাব?
আসলে মানত করা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সব সময় উম্মতদের নিরুৎসাহিত করেছেন। বিষয়টি আমরা অনেকেই জানি না। বরং আমরা মনে করি মানত করা খুব সওয়াবের কাজ। আসলে এটি কোনো সওয়াবের কাজ নয়
মানত করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে : আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৫)
কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যেই বস্তু মহান আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য নির্ধারণ করেননি মানত সেটি তার নিকটবর্তী করে না। বরং তাকদীরে যা আছে মানত সেটাই নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় যা সে খরচ করতে চায়নি। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৩১)মানত করলে তা আদায় করতে হবে
মানত পূর্ণ করার হুকুম
মানত করা জায়েয নয়। কিন্তু কেউ যদি কোনো ভাল কাজ করার মানত করে তাহলে তাকে তা পালন করতে হবে। যাকে আমরা বলি মানত পুরা করা। মানত পুরা করা ওয়াজিব। না করলে গুনাহ হবে। মানত পুরা করা একটি ইবাদত।
يُوفُونَ بِالنَّذْرِ
তারা মান্নত পূর্ণ করে। (সূরা ৭৬ দা’হর ৭)
وَمَا أَنفَقْتُم مِّن نَّفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُم مِّن نَّذْرٍ فَإِنَّ اللّهَ يَعْلَمُهُ
তোমরা যে খয়রাত বা সদ্ব্যয় কর কিংবা কোন মানত কর, আল্লাহ নিশ্চয়ই সেসব কিছুই জানেন। (সূরা ২ বাকারা ২৭০) আরো বলা হয়েছে: তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূরণ করে। (সূরা আল হজ, আয়াত ২৯)
আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেন : তারা মানত পূরণ করে। (সূরা আল-ইনসান, আয়াত ৭)
হাদীসে এসেছে; আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা:) বলেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মান্নত করে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানী করার মানত করে, সে যেন তাঁর নাফরমানী না করে (বুখারী)
অর্থাৎ; সালাত, সিয়াম, সাদাকা ইত্যাদি সৎকর্মের মান্নত করলে তা পূর্ণ করা জুরুরী। আর পাপ কাজের মান্নত, যেমন; কবরে মোমবাতি জ্বালানো, কোনো মাজারে পশু জবাই করার মান্নত ইত্যাদি তা থেকে বিরত থাকা জরুরী।
মানতের উদ্দেশ্যে
প্রথম প্রকার নিয়ত : তারা মনে করে মাজারে মানত বা দান করলে মাজারে শায়িত ওলী খুশী হন। তিনি খুশী হলে আমার মনের আশা পূরণ হবে। বিপদ দূর হবে। মানত কারীর ধারণায় মাজারে মানত করলে মাজারের ওলীর দোয়ায় বা তাঁর নেক নজরে আমার বিপদ কেটে যাবে বা উদ্দেশ্য অর্জন হবে।
দ্বিতীয় প্রকার নিয়ত : মাজারে মানত বা দান করছি আল্লাহর জন্যই। তবে মাজারে শায়িত ওলীর সুপারিশে আমার মনের আশা পূরণ হবে। ওলীর অসীলায় বা শাফাআতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমি মাজারে মানত বা দান করলাম।
তৃতীয় প্রকার নিয়ত: আমি জানি যে ওলী ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন না। তাঁর দোয়া বা নেক নজর পাওয়ার নিয়তও আমি করি না। তাঁর শাফাআত বা অসীলাও আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে তিনি আল্লাহর ওলী, তাকে সম্মান করা সওয়াবের কাজ এ জন্য আমি মাজারে মানত করি। দান-সদকা পাঠাই।
সম্মানিত পাঠক!
উপরের তিনটির যে কোনো একটি নিয়তে আপনি মাজারে মানত বা দান করবেন তো, তা শিরক হবে।
মানতের নিয়ম; একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানত করতে হবে, এবং মানতকৃত দ্রব্যদি অসহায়, এতিম, মিসনদের মাজে দান করতে হবে, মানতকৃত পশু এমন জাগায় জবাই করা যাবেনা যেখানে ওরশ, মেলা ও মুশরিদের উৎসবের স্থান সমূহ এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর উদ্দেশ্যে বলিদান ও নজরানা পেশ করার জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছে।
৪. رُكوع (রুকু) এবং سُجود (সুজুদ) মাধ্যমে শিরকঃ
আরবী رُكوع “রুকু” আমাদের নিকট রুকু হিসাবেই পরিচিত আর سُجود “সুজুদ” সিজদা নামে পরিচিত, এ দু’টি নামাজের অংশ। নামাজে রুকু ও সেজদার রহস্য হচ্ছে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার প্রতি চূড়ান্ত বিনয়-নম্রতা অথবা মহাশক্তির কাছে নিজেকে ছোট বা হীনতা ও ভক্তি প্রকাশ করার মাধ্যম আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে রুকু-সেজদা করা সম্পূর্ণ হারাম। সেটা কারো সম্মান, মর্যাদা আর যে অর্থেই হোক না কেন।
وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সেজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তাঁরই এবাদত কর। (সূরা ৪১ হা-মীম/ফুসসিলাত ৩৭)
সকল সৃষ্টি তার স্রষ্টা আল্লাহকে সিজদা করে:
এই বিশাল সৃষ্টি জগতের সব কিছু মহান পরওয়ারদেগারকে সেজদা করে। রাব্বুল আলামিনের দরবারে মাথা নুইয়ে দেয়। শতভাগ আনুগত্য স্বীকার করে। শুধু মানব ও জিন জাতির মধ্যে অবাধ্য বান্দা পাওয়া যায়। আর কোনো জীব মহান আল্লাহর অবাধ্য নয়। সবাই বাধ্য ও অনুগত। সবাই আল্লাহতায়ালাকে সেজদা করে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِّنَ النَّاسِ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ وَمَن يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِن مُّكْرِمٍ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاء তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে, যা কিছু আছে ভূমণ্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ। আবার অনেকের ওপর অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন, তাকে কেউ সম্মান দিতে পারে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। ’(২২ সূরা হজ্জ : আয়াত ১৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন; وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ এবং রুকু কর রুকুকারীদের সাথে (২ সূরা বাকারা আয়াত ৪৩)
আল্লাহ ব্যতীত অন্য যেকোন কিছুকে রুকু সিজদা করা হারাম;
অজ্ঞ লোকেরা কবরে সিজদা করে,কবরের তাওয়াফ করে,এর চৌকাঠে চুমু খায়-এই সকল কর্মকাণ্ড শরীয়তে না-জায়েয। আমাদের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর ইমামগণ এসব কাজকে স্পষ্ট ভাষায় হারাম ও না-জায়েয বলেছেন। কারণ তাওয়াফ,সিজদা,রুকু,হাত বেঁধে দাঁড়ানো-এইগুলো ইবাদত-উপাসনার বিভিন্ন রূপ। আমাদের শরীয়ত কবরের এরূপ সম্মানের অনুমতি দেয়নি,যা পূজা ও উপাসনার পর্যায়ে পৌঁছয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন,আগের উম্মতের পথভ্রষ্টতার কারণ ছিল অতিশয়তা। তাই তিনি আপন উম্মতকে এসকল কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকার তাকীদ করে গেছেন।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অন্তিম দিনগুলোতে বলেছেন-
لعن الله اليهود والنصارى، اتخذوا قبور أنبياءهم مساجد
ইয়াহুদ ও নাসারার উপর আল্লাহ অভিশাপ। ওরা ওদের নবীগণের কবরসমূহকে সিজদাগাহ বানিয়েছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫২৯
অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
ألا وإن من كان قبلكم كانوا يتخذون قبور أنبياءهم وصالحيهم مساجد. ألا فلا تتخذوا القبور مساجد، إني أنهاكم عن ذلك
তোমাদের আগের লোকেরা নিজেদের নবী-ওলীগণের কবরকে সিজদাগাহ বানাতো। সাবধান! তোমরা যেন কবরকে সিজদার জায়গা বানাবে না। আমি তোমাদের নিষেধ করে যাচ্ছি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩২/২৩; মিশকাত পৃ. ৬৯
আরেক হাদীসে আছে-اللهم لا تجعل قبري وثنا يعبد، اشتد غضب الله على قوم اتخذوا قبور أنبياءهم مساجد.
ইয়া আল্লাহ! আমার কবরকে ‘মূর্তি’তে পরিণত কোরেন না, যার পূজা অর্চনা হবে! ঐ জাতির উপর আল্লাহ চরম ক্রুদ্ধ, যারা নিজেদের নবীর কবরকে সিজদাগাহ বানায়। -মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ৮৫
সাহাবী কায়স ইবনে সা‘দ রা. বলেন, আমি ‘হীরা’ গিয়েছিলাম। ওখানে দেখলাম, লোকেরা তাদের সর্দারকে সিজদা করে। আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহর রাসূল (স:)ই তো সিজদা পাওয়ার বেশি উপযুক্ত! আমি যখন তাঁর কাছে এলাম আমার ধারণা তাঁকে জানালাম। তিনি বললেন-
أ رأيت لو مررت بقبري أ كنت تسجد له
বল তো তুমি যদি আমার কবরের কাছ দিয়ে গমন করতে, তাকে কি সিজদা করতে? আমি বললাম, لا জি না’ তিনি বললেন –
لا تفعلوا لو كنت آمرا أحدا أن يسجد لأحد لأمرت النساء أن يسجدن لأزواجهن لما جعل الله لهم عليهن من حق
(জীবিত অবস্থায়ও সিজদা) করো না। আমি যদি কাউকে আদেশ করতাম কোনো মাখলুককে সিজদা করার তাহলে নারীদের আদেশ করতাম যেন নিজের স্বামীদের সিজদা করে। স্বামীর ঐ হকের কারণে, যা আল্লাহ স্ত্রীর উপর আরোপ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২১৪০; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২৭৬৩; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১৪৭০৫)
চিন্তা করে দেখুন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতের ব্যাপারেও কবর-পূজার আশঙ্কা কত গভীরভাবে করেছেন! ফলে কত স্পষ্টভাষায় তা নিষেধ করেছেন! কবরে সিজদাকারীকে অভিশাপ করেছেন এবং ঐ কবরকে وثنا‘মূর্তি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন! এ গর্হিত কর্মকে আল্লাহর ক্রোধ প্রজ্বলিত হওয়ার কারণ সাব্যস্ত করেছেন!
এই সকল হাদীসের কারণে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আলিমগণের সিদ্ধান্ত, কবরে সিজদা করা ‘শিরকে জলী’(প্রকাশ্য শিরক)